আজকাল নারীর স্বনির্ভরতা পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে বিপন্ন করে তুলছে। নারী হয়ে উঠেছে শত্রু লিঙ্গ। নারীর নিরাপত্তা, আত্মসম্মান, স্বাধীন চিন্তার সুযোগ কেড়ে নিলেই কেবলমাত্র পুরুষ নিশ্চিন্ত হতে পারে এবং তার সবচেয়ে সহজ উপায় হল যৌন হিংসা। একজন নারী কেবল মাত্র পুরুষকে সুখ দেবার একটা শরীর, তার বেশি কিছু নয় পুরুষের এটা বারবার মনে করার এবং মনে করাবার প্রয়োজনীয়তা এখন তীব্র। নারীকে গায়ের জোরে অসহায় করে ফেলতে পারলে একদিকে তার স্পর্ধা গুড়িয়ে দেয়া যায় অন্যদিকে পৌরুষের তীব্র মনোবেদনা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়। পুজিবাদী সমাজে নারীর প্রধান পরিচয় সে যৌনবস্তু, পন্য বিক্রি থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে নারীর শরীর ও যৌনতাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সমাজের সর্বত্র পুজিবাদী এই আদর্শের বিকাশ আমাদের একধরনের বিকৃত যৌনচর্চায় অনুপ্রানিত করে।
পর্নোগ্রাফির প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমেরিকান নারী বাদী রবিন মর্গান বলেছিলেন “পর্ণোগ্রাফী হল তত্ত্ব আর ধর্ষণ হল অনুশীলন/চর্চা” অনেকে বলতে পারেন তাই যদি হয় তাহলে বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজে যত ব্যাপক হারে পর্ণোগ্রাফী দেখা হয় ঠিক সেই হারেই ধর্ষণ হত। কথা যৌক্তিক বটে। পুজিবাদী পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমরা সবাইকে ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারলেও ধর্ষকামী হিসেবে চিহিœত করতে পারি। ধর্ষকামী চিন্তা চেতনার অনেক চরম লক্ষনের মধ্যে যৌন হয়রানী/যৌন নিপীড়ন একটি। যৌন নিপীড়ন নারী শরীরের প্রতি লোভ লালসার জায়গা থেকে বিবেচনা করলে পুরোটা বোঝা হবেনা। এর মধ্যে উগ্র একধরনের উল্লাস আছে, আরেকজন মানুষের আত্মচেতনার অন্যতম স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করে নিজের ক্ষমতা প্রকাশ করার মধ্যে দিয়ে এই বিকৃতির কুৎসিত প্রকাশ ঘটে। এ ধরনের আক্রমনাত্মক ব্যবহারের পেছনে কেবল যৌন আকর্ষণ থাকেনা। থাকে অন্যের ইচ্ছা, সাতন্ত্র্য ধুলিস্যাৎ করে দেবার মত এক হিংসা। যৌন নিপীড়নের পেছনে আরো কাজ করে নারীর প্রতি বিদ্বেষ, জোর খাটানোর তাগিদ, অপমান করার সুখও। অন্যের ব্যবহারের লক্ষ্য হয়ে যখন পরিচয়, ব্যক্তিত্ব, আমি, তুমি বা অনামী শরীরে পরিণত হয় তখনই অপমানবোধ তথা যৌন নিপীড়নের শুরু। ব্যবহৃত শরীরের আমি চেতনাকে মুছে দিতে পারলেই যৌন নিপীড়ন চরিতার্থ। একটা গোটা মানুষ এক্ষেত্রে নারী হঠাৎ তখন মানুষই নয় শুধুই যৌনাঙ্গ। এবং এটা এমনভাবে করা হয় যাতে নারীকে অসহায়, সাতন্ত্র্যহীন, ফালতু যৌন ব্যবহারের বস্তু বলে প্রতিপন্ন করে অপমানিত করা যায়। নিপীড়িত করে তার অধস্তন অবস্থাটি পুন:প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
নারী পুরুষ সম্পর্ক আর দশটা সম্পর্কের মতই ক্ষমতা সম্পর্ক। ঘরে বাইরে নারীর উপর আগ্রাসী যৌন আচরন,যৌন হয়রানী যৌন নিপীড়ন ধর্ষণ সবই পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা কাঠামোতে নারীর অধস্তনতাই প্রকাশ করে নানা রুপে। তাই ধর্ষণ, যৌন হয়রানী/নিপীড়ন, নারীর সম্প্রতি ব্যাতিরেকে তার উপর যে কোন ধরনের আগ্রাসী যৌন আচরন ক্ষমতা প্রদর্শনের, দমন-পীড়নের, কর্তৃত্ব করার কুৎসিত বহিঃপ্রকাশ বই আর কিছু নয়। এই সহস্রাব্দের প্রথম তিনশ বছরে পর পর চারটি ধর্মযুদ্ধ হয়। এর বীরদের ইতিহাস আমরা জানি। কিন্তু স্বধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন হয় তার প্রধান শিকার যে নারী তার ইতিহাস আজো অলিখিত আছে। তাই রাষ্ট্র, জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এই ধারণাগুলোকে আপাতদৃষ্টিতে নিরপেক্ষ মনে হলেও পুরুষতান্ত্রিকতা তার ভেতরে নীরব ঘাতক হিসেবে সহাবস্থান করে।
জাতীয়ভাবে উদযাপিত উৎসবগুলোতে নারী নিপীড়নের যে বিভীষিকাময় চিত্র উন্মোচিত হয় তা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের জন্য গ্লানির। পহেলা বৈশাখ, ১৬ই ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারী সকল আনন্দ উৎসবের জমায়েত, গোপনে উপস্থিত নারীকে যৌন হয়রানী করে বিকৃত আনন্দ লাভের উৎসবে পরিণত হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে কোন মেয়ে পরলে সেই মেয়ের দিকে এগিয়ে আসে অসংখ্য হাত এবং মেয়ের স্তন, তলপেট উরু ও নিতম্বে যাদের থাবা পড়ে তারা ভোরে প্রভাতফেরী করে , বৈশাখে এসো হে বৈশাখ কোরাসগায় এবং ভিড়ের মধ্যে বিকৃত যৌন আনন্দ শেষে ভালমানুষের মত মিশে যায়। এই যদি হয় বাঙ্গালীর জাতীয়তাবোধ তবে ঘৃন্য এই উৎসব গুলোতে নারী একযোগে বর্জন করুক।
যৌন হয়রানীর এই ঘটনাগুলোকে আমরা তাত্ত্বিকভাবে স্বীকার পর্যন্ত করতে চাইনা।এর প্রমান মেলে যৌন হয়রানী শব্দের বদলে “ইভটিজ” শব্দের ব্যবহার। ইভটিজিং শব্দটার কোন মানে নেই।এখানে দুটো বিষয় লক্ষনীয়। ইভ মানে শুধু নারী নয়, আদিম নারী।যেন যে কোন মেয়ের, একটাই আসল পরিচয় সে আদিম অনাবৃতা নারী। সেই জন্যেই তাকে যে কোন জায়গায় যে কোন অবস্থায় টিজ করা যায়। সাথে সাথে এই শব্দটি ব্যবহার করলে ঠাট্টাভাব বজায় রাখা যায়। আমরা সবাই এই স্তরের যৌন হয়রানীকে হাল্কা করে দেখতে চাই। মনে করি ১. পাত্তা না দিলে চলে যাবে। ২. ছেলেরা একটু আধটু দুষ্টুমি করেই থাকে। ৩. ভালে মেয়েদের তো ছেলেরা বিরক্ত করেনা। যৌন নিপীড়নের প্রতিরোধ আন্দোলনের ব্যানার দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক পিতৃতুল্য শিক্ষক একবার বলেছিলেন “যৌন” শব্দটি চোখে দেখলে তার নাকি এত খারাপ লাগে যে তার ওজু ভেঙ্গে যায়। বীর্যপাত না হলে একজন মানুষের ওজু ভাঙ্গে কি করে ? যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে শুধু “যৌন নিপীড়ন শব্দটা দেখে তার ওজু কি করে ভাঙলো?” নাকি এটা তার আগ্রাসী, নিপীড়ন সুলভ যৌন চিন্তা চেতনার প্রতিচ্ছবি যে কারনে তিনি “যৌন-নিপীড়ন” শব্দটা দেখেও উদ্দীপ্ত হন? খবরের কাগজে তো প্রতিনিয়ত ওজু ভাঙ্গার আমন্ত্রন। ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, গণধর্ষণ, মা-মেয়ে এক সাথে ধর্ষণ, ২ বোন, ৪ বোন, ৬ বোন একসাথে ধর্ষণ ইত্যাদি খবরতো প্রতিদিন সেখানে ছাপা হচ্ছে। তাহলে ঐ ধর্ষণ, যৌন হয়রানী, যৌন নিপীড়ন শব্দগুলো চোখে পরার ভয়ে তিনি এবং তার মত অন্যান্য “সংবেদনশীল” পুরুষেরা খবরের কাগজ পড়া ছেড়ে দিয়েছেন? বস্তুত যৌন কেলেঙ্কারীর খবর পড়তে শুনতে পুরুষের যত জোশ তা অন্য কিছুতে মেলা ভার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন কারীদের অনেকে অভিযুক্ত করেছেন এই বলে “এই আন্দোলন ফলে নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।” এই মন্তব্যটি মিডলক্লাস সুশীলদের স্বার্থরক্ষা বা এবং অতি পুরুষতান্ত্রিকতার দোষে দুষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর যৌন নিপীড়নের মত ঘৃন্য ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের কাছে কোন ঘটনাই মনে হলনা বরং এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করাটাকেই মনে হল অন্যায়? এই দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের মধ্যে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীর ও শিক্ষকগণের শ্রেণী চরিত্র ও পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর এই যে ভাবমূর্তি যা অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে অক্ষুন্ন হল তা ভবিষ্যতে জাতি হিসেবে আমাদের জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে থাকবে তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। শিক্ষক, আইনজীবী, প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, রাজনৈতিক কর্মী, ধর্মগুরু যেই হোকনা কেন লৈঙ্গিক অবস্থানে পুরুষ এবং তাদের জগৎটা পুরুষতান্ত্রিক। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যার জন্ম সচেতন চেষ্টা ছাড়া নারীবান্ধব, নারীবাদী, সে কোনভাবেই হয়ে উঠতে পারেনা। দৃষ্টিভঙ্গিটা পুরুষতান্ত্রিক বলেই নারীকে তারা গণ্য করে অধস্তন লৈঙ্গিক পরিচয়ের বস্তু হিসেবে যা লেহনযোগ্য, পীড়নযোগ্য। পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীসম্পন্ন ছাত্র-শিক্ষকের কোন তফাৎ নাই। উভয়েই ধর্ষক, যৌন নিপীড়ন কারী। শিক্ষক নারী নির্যাতন করে তার রুমে, ছাত্র নারী নির্যাতন করে ক্লাস রুমে ক্যাম্পাসে। যৌন হয়রানী/যৌন নিপীড়নের বহু ধরন রয়েছে। অন্দর বাহির বা পাবলিক প্রাইভেট অনুযায়ী বিভাজন ছাড়াও এগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরীতে ফেলা যেতে পারে। মৌখিক যৌন হয়রানী বা ভার্বাল, নন ভার্বাল বা অভিব্যক্তিক যৌন হয়রানী, শারীরিক যৌন হয়রানি। ভার্বাল বা মৌখিক যৌন হয়রানীর মধ্যে কাউকে যৌনকাজে অনাকাঙ্খিত আমন্ত্রণ ছাড়াও যৌন রসাত্মক রসিকতা এবং কথাও থাকতে পারে। আবার নন ভার্বাল বা অভিব্যক্তিক যৌন হয়রানীর মধ্যে থাকতে পারে অঙ্গভঙ্গি, আকার-ইঙ্গিত, যৌন উস্কানীমূলক ছবি প্রদর্শন বা নিজে দেখাও যদি তা উপস্থিত অন্য কারো জন্য হয় অনাকাঙ্খিত। আর শারীরীক যৌন হয়রানী বলতে বোঝায় প্রাপকের জন্য যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত শারিরীক স্পশর্, ধর্ষনের চেষ্টা, ধর্ষনের চেষ্টার ফলে যে কোন ধরনের ক্ষতি, শারীরিক ক্ষতি। যৌন হয়রানীকারী বা নিপীড়ক কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে তার উপরেও নির্ভর করে যৌন নিপীড়নের ধরন এবং নিপীড়ন কারীর মনস্তত্ব। শেষ বিচারে এটা ক্ষমতা সম্পর্কেরই ব্যপার। পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামোতে নারীর আসল পরিচয় সে যৌনবস্তু, দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক।তাই ক্ষমতাবান পুরুষেরা নির্বিচারে, এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক মৌন সম্পত্তির সাথে অধস্তন নারীর উপর যৌন হয়রানী চালিয়ে যেতে পারে বছরের পর বছর। নিপীড়কের সাথে নিপীড়নকারীর বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কও থাকতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে এ পর্যন্ত যে ধরনের যৌন হয়রানীর চিত্র উন্মোচিত হয়েছে তাতে দেখা যায় শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর বন্ধুসলভ যোগাযোগ ছিল যাকেই শিক্ষক কৌশলে ব্যবহার করেছে। যৌন হয়রানীকারী যে কৌশলগুলো অবলম্বন করে তার মধ্যে ব্যাক্তিগত সম্পর্কের জের ধরে নির্জনে সাক্ষাৎ করা, এমন একটি আবহ তৈরী করা যা আপাতদৃষ্টিতে নারী জন্য স্বস্তিদায়ক এবং প্রয়োজনের অধিক “গভীর” ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরী করা তাও হতে পরে। উদাহরনস¦রূপ আমেরিকার নারীবাদী লেখক নাওমি উলফের কথা বলা যায় যিনি বিশ্বখ্যাত ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাবান এবং খ্যাতিমান শিক্ষক হ্যারল্ড ব্লুম কর্তৃক যৌন হয়রানীর শিকার হন। উলফ তার লেখাতে বলেছেন যে কিভাবে ব্যাক্তিগত সাক্ষাতের নামে নির্জনে তাকে যৌন হয়রানী করেন ব্লুম। হ্যারল্ড বুমের নামে পূর্বেও অভিযোগ আনা হয় যা তার ক্ষমতাবান অবস্থানের কারনে সম্পূর্ণই উপেক্ষা করা হয়। অথচ ঘটনা শেষে দোষ খুঁজতে শুরু করা হয় নিপীড়িতের এবং অবধারিতভাবে দোষ খুজেও পাওয়া যায় ব্যাক্তিগত সম্পর্ক রাখার যা কিনা নিপীড়ন কারই তৈরি ও ব্যবহার করে সুনিদৃষ্টভাবে যৌন হয়রানীর উদ্দেশ্যেই। যৌন হয়রানীকারীর আচরনগত যে রূপরেখা পাওয়া যায় তাতে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জের ধরে হয়রানীর সুযোগ নেয়ার বিষয়টি উন্মোচিত হয়। নারীকে এর ভিত্তিতে অপরাধী এক্ষেত্রে অন্তত কোনভাবেই বলা যায়না। যদি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকাই নারীর দোষ হয় তাহলে পরিবারে নারীর উপর সহিংসতা, ম্যরিটাল রেপ বিষয়গুলোতেও নারীকেই দোষী বলতে হয় যা কিনা স্পষ্টভাবেই অন্যায় এবং পুরুষতান্ত্রিক আচরন বলে বিবেচিত হবে। উলফ তার উপর হওয়া যৌন হয়রানীর কোন ক্ষতিপূরন (আর্থিক বা নৈতিক সমর্থন আকারে) পাননি। উপরন্ত তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন যার ফলাফল গিয়ে পরে তার শিক্ষাজীবনে। ঘটনার দুই দশক পর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরুষ শিক্ষক কর্তৃক নারী ছাত্রীর উপর যৌন হয়রানী কে কতটা গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে তা তিনি অনুসন্ধান করতে যান। এ অনুসন্ধানে একের পর এক বেরুতে থাকে ক্ষমতাবান এবং যশস্বী শিক্ষকদের কর্তৃক ছাত্রীর যৌন হয়রানী এমনকি ধর্ষণও যা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করতেও নারাজ। উলফ প্রতীক্ষা করে গেছেন কর্তৃপক্ষের দ্বায়িত্বশীল আচরনের জন্য যার ফলাফল ছিল শূণ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের যে শিক্ষকের উপর যৌন হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে তিনি কৌশলগতভাবে উপরোক্ত পদ্ধতিটিই ব্যবহার করেছেন বলে বোঝা যায়। কামাল উদ্দীন শ্রেণীগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একজন ক্ষমতাবান পুরুষ। ২০০৮ সালে যখন তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়। প্রতিবাদী ছাত্র ছাত্রীর চাপ, অভিযোগের সত্যতা কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তার বিরুদ্ধে পূর্বেও এমন অভিযোগ আনা হয় যার কোন প্রতিকার তখন করা হয়নি। শাস্তি হিসেবে তাকে সবেতন ছুটি দেয়া হয় যেটা স্পষ্ট ভাবেই কোন শাস্তিই নয়। যৌন নিপীড়নের শাস্তি কখনো সবেতন ছুটি হতে পারেনা। জেল জরিমানা সহ চিরতরে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকে নিষিদ্ধ করা হলে তবে তার উপযুক্ত সাজা হত। তার ক্ষমতার প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি ২০১২ সালে যখন বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষকদের অসম্মতি সত্বেও ভি.সি একক ক্ষমতা বলে তাকে কাজে পুর্ণবহাল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কনসালটেন্ট বাহিনীর তিনি একজন অন্যতম। সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টরা যারা দেশে প্রাইভেটাইজেশনের নামে গনস্বার্থবিরোধী শিক্ষানীতি চালু করতে চান তাদেরই অন্যতম তিনি। বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের কাজ দেবার নামে একদল দালাল তৈরী করছেন যারা নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি ব্যবহার করছেন। এই শ্রেণীর ছাত্র-শিক্ষকরাই তার পুর্ণবহাল সমর্থন করছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট এই শ্রেণীর ছাত্র-শিক্ষক যে কতটা পুরুষতান্ত্রিক অগণতান্ত্রিক এবং একই সাথে যৌন নিপীড়নের ধারক ও বাহক একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতা প্রান্তীয় দেশগুলোতে এই ভাবেই নিপীড়ন মূলক পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো লালিত পালিত ও পুষ্ট করে। পূর্ব পশ্চিম যে কোন দেশ হোকনা কেন পুরুষতান্ত্রিকতা , নারী নিপীড়ন যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। উলফ প্রতিকার পায়নি বলে যে আমরা পাবনা, প্রতিরোধ করবোনা এমনটাও নয়। নারী দৃশ্য অদৃশ্যরুপে সব সময়ই ছিল দিন বদলের শক্তিতে। এর প্রমান পাই জাহাঙ্গীর নগরের ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীরা মেনে নিতে পারেনি যে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী ও ধর্ষক নির্বিচারে ক্যম্পাসে তার কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে পারবে। তারা তাদের বন্ধুর অপমান নিজের অপমান হিসেবে উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই এটা কেবল ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন নয় আত্মসম্মান বোধে উদ্দীপিত নারী পুরুষের আন্দোলনও বটে। নারীর উপর যৌন হয়রানী, ধর্ষণ যে কোন ধরনের যৌন নিপীড়নকে আমরা যখন নারী পুরুষ প্রত্যেকে আমরা নিজেদের নিরাপত্তাহীনতা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবো, শুধু ভূক্তভোগী না প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অসম্মান হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবো তখনই একটি নিপীড়ন মুক্ত সমাজের দিকে আমরা ধাবিত হতে শুরু করবো। নারী পুরুষ কেউই বিনা প্রতিবাদে অন্যায় আচরন মেনে নেয়না, তা সে যতই প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা লাভ করুকনা কেন। আমাদের আশার কথা, ভরসার জায়গা এটাই।
http://www.prothom-alo.com/international/article/467680/%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B6%E0%A7%8B%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0